‘কার কাছে বিচার চাইব? আমার কলিজাডারে যে মারছে একদিন না একদিন আল্লাহ তার বিচার করবো।’ নাতির কবরের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই প্রতিবেদকের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী জিল্লুর শেখের শতবর্ষী দাদি।

‘নামাজে যাওয়ার আগে ঘরে দেখে গেছি, ফিরে জানলাম ছেলে আর নাই’

‘কার কাছে বিচার চাইব? আমার কলিজাডারে যে মারছে একদিন না একদিন আল্লাহ তার বিচার করবো।’ নাতির কবরের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই প্রতিবেদকের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী জিল্লুর শেখের শতবর্ষী দাদি। এ ছাড়া ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নির্বাক জিল্লুর শেখের বাবা। আর ছেলের মৃত্যুর এক মাস পার হলেও প্রতিদিনই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন জিল্লুর শেখের মা শাহনাজ বেগম।

নিহত জিল্লুর শেখ রাজধানীর আফতাবনগরে অবস্থিত ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। জিল্লুর একই এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করতেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে জিল্লুর বড়। বাবা হাসান শেখ পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। নিহত জিল্লুর শেখের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি গ্রামে।

পরিবারের দাবি, গত ১৮ জুলাই আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে নিহত হন জিল্লুর শেখ। মুঠোফোনে খবর পেয়ে পাশের একটি হাসপাতালে ছুটে গিয়ে পরিবার দেখতে পায় পড়ে আছে জিল্লুরের নিথর মরদেহ। ওইদিন রাতেই মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। পরদিন সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সংসারের বড় ছেলেকে হারিয়ে সর্বস্বান্ত পরিবার। মৃত্যুর এক মাস পার হলেও জিল্লুরের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগে জীবিকার তাগিদে পরিবারসহ ঢাকায় পাড়ি জমান হাসান শেখ। রাজধানীতে মাছের ব্যবসা করেন তিনি। চার সন্তানের পরিবার নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিলো হাসান-শাহনাজ দম্পতির। প্রথম সন্তান মেধাবী জিল্লুরকে বড় কর্মকর্তা বানানোর ইচ্ছা ছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জিল্লুর। সন্তানের এমন মৃত্যুতে নির্বাক বাবা-মা সহ পুরো পরিবার। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হয়নি কোনো মামলা। বিচারের আশাও ছেড়ে দিয়েছেন নিহত জিল্লুরের পরিবার। তবে জিল্লুরের এ ত্যাগ দেশবাসীকে মনে রাখার অনুরোধ পরিবারের।

নিহত জিল্লুরের মা বলেন, ‘কার কাছে বিচার চাইব? আর বিচার করলে হাসিনা কি আমার ছাওয়ালরে ফেরত দিতে পারবে, আমার ছাওয়ালরে যে মারছে আল্লাহ একদিন না একদিন তাদের বিচার করবেন। আমার সন্তান অবুঝ। গত ১৫ জুলাই কলেজে ভর্তি করেছি। ঘটনার দিন জিল্লুর বলে মা নামাজ পড়তে যাই, বললাম যাও নামাজ পড়ে বাসায় চলে এসো। কিন্তু চার রাকাত ফরজ নামাজ শেষ করার পর বন্ধুরা মেসেজ দিলে আন্দোলনে চলে যায় জিল্লুর। এরপর জিল্লুর পুলিশের গুলিতে মারা যায়।’

নিহত জিল্লুর শেখের বাবা হাসান শেখ বলেন, ‘ওইদিন দুপুরে নামাজে যাওয়ার আগে আমি আমার সন্তানকে ঘরে দেখে গেছি। ফোন পেয়ে ফিরে এসে জানতে পারলাম আমার ছেলে আর নাই। জিল্লুরের এক বন্ধু আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল জিল্লুর মারা গেছে। ওই সময় ছুটে গেলাম রাজধানীর আদাবর এলাকায় অবস্থিত নাগরিক হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে দেখি আমার বাবা শুয়ে আছে। পরে ঢাকায় জানাজা শেষ করে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসি। সেখানেই দাফন করা হয়েছে।’

এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার কাছে মামলা দেব। কী বিচার চাইব। যার টাকা আছে ক্ষমতা আছে তার বিচার আছে।
নিহত জিল্লুরের শতবর্ষী দাদি বলেন, ‘বিচার এইটুকুই চাই, যে মারছে ওরে সন্তানের সামনে গুলি করে মারলে বুঝত কলিজার মধ্যে কেমন লাগে।’
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। আর ঘটনাস্থল যেহেতু ঢাকায় তাই চাইলেও তারা এখানে মামলা করতে পারবেন না। তারা চাইলে যে থানার আওতাধীন সেখানে মামলা করতে পারেন।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours