রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে ইমাম হাসান। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে গত ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা পদচারী–সেতুর কাছে মারা যান ইমাম হাসান।
২৭ বছর ধরে পুলিশে কর্মরত ময়নাল হোসেন ছেলের মৃত্যুর পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ইমাম হাসান নারায়ণগঞ্জের সরকারি আদমজী নগর এমডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। কাজলা পদচারী–সেতুর বিপরীত পাশে পূর্ব রসুলপুরে তাঁদের ভাড়া বাসা ছিল। সে বাসায় ছেলের স্মৃতি তাড়া করছিল। তাই সবুজবাগ থানার মাদারটেকে নতুন ভাড়া বাসায় এসে ওঠে পরিবারটি।
নিহত ইমাম হাসানের মা পারভীন আক্তার বলেন- ‘পুলিশের ছেলে পুলিশেরই গুলিতে মরল, আমার স্বামী এই প্রতিদান পাইল? আমার ছেলেরে কতগুলা গুলি দিছে, ছেলে তো চোর-সন্ত্রাসী ছিল না। যে মারল, তার একটুও মায়া লাগে নাই? মারতে কয়টা গুলি লাগে? …আমি সঠিক বিচারটা চাই।’
গত ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। ২০ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। টানা আন্দোলনে যখন উত্তাল যাত্রাবাড়ী, তখন ইমাম হাসান সে আন্দোলনে অংশ নেন। যদি কিছু হয়, সেই ভয় থেকে তিন–চার দিন এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ছেলের ব্যাগ কোলে নিয়ে মা ফুটপাতে বা একটু নিরাপদ জায়গায় বসে থেকেছেন। ঘটনার দিন দুপুর ১২টার পর ইমাম হাসান বন্ধুদের সঙ্গে পদচারী–সেতুর পাশে লিটন স্টোরে গিয়েছিলেন চা খেতে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মায়ের কাছে রুটি খেতে চেয়েছিলেন। দুটো রুটি আর ভাজি ছিল তাঁর শেষ খাওয়া।
পারভীন আক্তার বললেন, ছেলে বের হওয়ার আধঘণ্টার মধ্যেই গুলি লাগার খবর আসে। বাসা থেকে ঘটনাস্থল খুব কাছে হলেও ঘুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শুধু রক্ত দেখেছেন, ছেলের লাশ পাননি।
পারভীন আক্তারকে ছেলে মারা যাওয়ার খবর জানানো হয় রাতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজও দেখেছেন পারভীন আক্তার। সে ফুটেজে ছেলেকে একদম কাছ থেকে পুলিশ গুলি করছে, এক বন্ধু ছেলেকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে ওই বন্ধুও উপায় নেই দেখে ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়াচ্ছে, আর পুলিশ তখনো গুলি করছে। সে সময়ও জীবিত ছিল ছেলেটা।
+ There are no comments
Add yours